শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ পূর্বাহ্ন

উপ-সম্পাদক :: দিদার সরদার
প্রধান সম্পাদক :: সমীর কুমার চাকলাদার
প্রকাশক ও সম্পাদক :: কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর
যুগ্ম সম্পাদক :: মাসুদ রানা
সহ-সম্পাদক :: এস.এম জুলফিকার
প্রধান নির্বাহী সম্পাদক :: মামুন তালুকদার
নির্বাহী সম্পাদক :: সাইফুল ইসলাম
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক :: আবুল কালাম আজাদ
সংবাদ শিরোনাম :
তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারণে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে দৈনিক যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিড়ি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল দুষ্টামিটাও ছিল যেমন স্পর্শকাতর, খেসারাতটাও দিতে হল তেমনি ভয়ঙ্কর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের ৫ সদস্যের বরিশাল মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি গঠন গৌরনদীতে ইউএনওর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমে খালের কুচুরিপানা ও ময়লা পরিস্কার করল বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা বর্নাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে গৌরনদীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত আমাদের নেতা তারেক রহমান একটি সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান-জহির উদ্দিন স্বপন মেয়র হারিছ গ্রেপ্তারের খবরে গৌরনদীতে সাধারন মানুষের উল্লাস ফাঁসির দাবিতে বিএনপির বিক্ষাভ মিছিল গৌরনদীতে এইচপিভি টিকা দান ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন কাশিপুরের ড্রেজার ব্যবসায়ী সুমনের অপকর্মে কেউ খুন হলে দায় নেবে না বিএনপি
রাবেতা মডেল কলেজের উন্নয়ন বরাদ্দ বাতিলকারীদের উদ্দেশ্য কি?

রাবেতা মডেল কলেজের উন্নয়ন বরাদ্দ বাতিলকারীদের উদ্দেশ্য কি?

ফাইল ছবি

তাজুল ইসলাম নাজিম:

লংগদু উপজেলা। গত ২জুন মটর চালক নয়নকে হত্যা ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশে আলোচিত হয়ে উঠে। উপজেলাটির ব্যপার পরিচিতি পায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে দুটি উপজেলা সবচেয়ে বেশি বাঙালি অধ্যুষিত লংগদু তার একটি। অন্যটি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলা।

রাঙামাটি জেলার কৃষি উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় লংগদুতে। মৎস আহরণেওও এগিয়ে এই উপজেলা। জেলার সবসবচেয়ে বড় স্থানীয় বাজার(মাঈনীমূখ) এই উপজেলায় অবস্থিত।

পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাঙালি অধ্যুষিত লংগদু ও মাটিরাঙা উপজেলা। পাহাড়ে উন্নয়নের নামে সরকারের পর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় কারী জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী ‘ইউএনডিপি'(UNDP)। অভিযোগ রয়েছে ইউএনডিপি পাহাড়ে ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করার পর ২০১২ সাল পর্যন্ত লংগদু ও মাটিরাঙা উপজেলাকে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসেনি শুধু বাঙালি অধ্যুষিত বলে। ২০১২ সাল থেকে আংশিক কার্যক্রম শুরু করে তাও উপজাতীয় এলাকাগুলোতে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন উন্নয়নের নামে পাহাড়ে কি ধরনের বৈযম্য হচ্ছে। তাছাড়া, পাহাড়ে বাঙালিসহ ১৩টি সম্প্রদায়ের মধ্যে কেবল চাকমারাই ইউএনডিপির সবসবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় বলে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ হতে একাধিকবার আভিযোগ করা হয়েছে।

লংগদু উপজেলার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে একমাত্র “রাবেতা মডেল কলেজ”। আমার আজকের লেখার মূল বিষয় এই কলেজের উন্নয়নে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ ও তা স্থগিত প্রসঙ্গে।

আগেই বলেছি লংগদু উপজেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাবেতা মডেল কলেজ যা ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রয়েছে রাবেতা মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়, লংগদু উপজেলার সীমানা ঘেষা পার্শ্ববর্তী বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলীতে ইসলামিক সেন্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের (বর্তমান নাম আমতলী উচ্চ বিদ্যালয়) নাম উল্লেখযোগ্য।

দরিদ্র পীড়িত লংগদু উপজেলার শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পাশ করার পর অত্র এলাকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে জেলা সদরের স্থায়ীভাবে থেকে পড়াশোনা করা সম্ভব ছিল না। তাই অত্র এলাকার জন্য একমাত্র আলোকবর্তিকা হিসেবে শিক্ষার আলো জ্বেলে আসছে রাবেতা মডেল কলেজ। লংগদু উপজেলায় এখন ঘরে ঘরে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাশ ছেলে মেয়ে থাকলেও অনার্স বা ডিগ্রী পাস শিক্ষার্থীর হাতে গোনা। এর প্রধান কারণ নিজ উপজেলায় এইচএসসি পর্যন্ত পড়তে পারলেও কলেজে ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স না থাকায় দরিদ্র বাবা-মা উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বাহিরে পাঠানোর সামর্থ্য রাখে না।

 

খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর আছে যারা উচ্চশিক্ষার জন্য জেলা শহরে যায়। এতটুকু বলা যায় যদি কলেজটি না থাকতো তাহলে হয়তো এসএসসি পাশের পরেই ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়তো। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে অত্র রাবেতা মডেল কলেজ, রাবেতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও আমতলী ইসলামিক সেন্টার উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র বাঙালিরা লেখাপড়া করে তা নয় উপজাতি শিক্ষার্থীরাও সমান সুযোগ পেয়ে পড়াশোনা করে আসছে। পাহাড়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলেও উক্ত প্রতিষ্ঠানে কখনোই কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি।

এবার কলেজের কিছু দুর্দশার কথা বলি। ১৯৯৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে জামায়াত সম্পৃক্ত থাকার অজুহাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সেখানে কোনো উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়নি বলে অনেকে মনে করেন।

এরপর বিএনপি জামাত ক্ষমতায় আসলে ২০০৩ সালে তৎকালীন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি হতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনাব ওয়াদুদ ভূইয়া একটি একতলা ভবন উদ্বোধন করেন। বর্তমানে কলেজে একটি দ্বিতল (ছোট আকারের) ও দুটি সেমি পাকা ভবন রয়েছে (পুরনো হয়ে গেছে)।২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো বরাদ্দ পায়নি কলেজটি। পরিতাপের বিষয় হলো কলেজটিতে এখনো ডিগ্রি বা অনার্স কোর্স চালু না হওয়া।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার এবং পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা প্রসারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম দফায় সারাদেশে ১৯৯ টি ও দ্বিতীয় দফায় ৬৪ টি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে জাতীয়করণের আওতায় রাঙামাটি অন্যান্য উপজেলায় কলেজগুলোর জাতীয়করণ হলেও সেই আওতায় পড়েনি লংগদু উপজেলার একমাত্র কলেজ রাবেতা মডেল কলেজ।

জানিনা কেন, কিভাবে, কোন শুভ বুদ্ধির উদয়ের ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও রাংগামাটির স্থানীয় এমপি জনাবা ফিরোজা বেগম চিনুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩কোটি টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ করে রাবেতা মডেল কলেজের জন্য। হয়তো রাজনীতির ঊর্ধ্বে এসে অত্র এলাকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ও দলীয় ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জনগনের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কলেজের উন্নয়নে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য আমির ব্যক্তিগত ও অত্র এলাকার জনগণের পক্ষ হতে স্থানীয় এমপি জানাবা ফিরোজা বেগম চিনু ও আওয়ামীলীগ সরকারকে সাধুবাদ জানাই।

লেখাটি এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না। লেখাটি আরো দীর্ঘ করতে হয়েছে। অতি উৎসাহী একটি পক্ষের উস্কানিমূলক প্রচারণা ও পত্রিকায় লেখালেখির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে থেকে রাবেতা মডেল কলেজের জন্য ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ জামায়াত নেতা প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাদের আরও অভিযোগ উক্ত প্রতিষ্ঠান কে ঘিরে অত্র এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে। সেখানে জামাত-শিবির গোপন মিটিং ও নাশকতার পরিকল্পনা করে।

যেহেতু অতি উৎসাহী লোকদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বরাদ্দ স্থগিত করেছে তাই তাদের অভিযোগটি ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের জনসমর্থন থাকার পরও তারা বরাদ্দটি বন্ধ করতে পেরেছে বা কর্তৃপক্ষ বন্ধ করেছে। তাই আমরা অনুমান করে নিতে পারি তাদের হাত অনেক লম্বা হবে। আসলে এরা কারা? চলুন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে তাদের অভিযোগের সত্যতা খুজিঁ।

যেহেতু জামায়াতের প্রথম সারির নেতা দুর্গম উপজেলা লংগদুতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে তাই অনুমান করা যায় উক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে, অশিক্ষিত দারিদ্রতাকে পুঁজি করে উক্ত এলাকায় হয়তো জামাত তাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছে। মোটেইনা। লংগদু উপজেলার মোট ভোটার প্রায় ৪৫ হাজার যার মধ্যে আট থেকে দশ হাজার উপজাতি। উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের তালিকা দেখলে বুঝা যায় সেখানে আসলে জামায়াতের অবস্থান কি।

লংগদু উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থিত, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) জামায়াত সমর্থিত, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এখানে উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় জামাত থেকে ভাইস চেয়ারম্যান জয়ী হয়েছে। এর আগেরবার ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ছিলো। এছাড়াও সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের ২টি জনসংহতি সমিতি, ৪টি আওয়ামী লীগ ও একটিতে বিএনপি’র চেয়ারম্যান রয়েছে। সাতটি ইউনিয়নের একটিতেও কোন ইউপি সদস্য বা মেম্বার জনপ্রতিনিধি নেই জামায়াতের। তাছাড়া জেলা, মহানগর ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কোনো নেতাও তৈরি হয়নি লংগদু উপজেলা থেকে।

বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা বিএনপির ঘাঁটি বলে যে প্রচার ছিল এতদিনে তা আজ আর নেই। লংগদু উপজেলার আওওয়ীমী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে রাঙামাটি জেলা পরিষদের একজন সদস্য। উপজাতীয়রা জাতীয় রাজনীতির না করায় (খুবই কমসংখ্যক করে) আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক এখন লংগদু উপজেলা।

সুতরাং জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের ভয় দেখিয়ে, পত্র পত্রিকায় নিউজ করে যারা উক্ত এলাকার শিক্ষা প্রচারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠাটির উন্নয়ন বরাদ্দ বন্ধ করে দিল এরা কিছুতেই বাঙালি অধ্যুষিত লংগদু উপজেলার ভালো চায়না তা সহজেই অনুমেয়।

প্রিয় পাঠক ওপরে প্রশ্ন রেখেছিলাম এরা কারা। এরা ঐ একই চক্রের লোক না তো যারা বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা বলেন বিগত দিনে তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লংগদু উপজেলাকে অন্তুর্ভুক্তি করেনি।
আমরা সবাই জানি তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। পাহাড়ের যত উন্নয়ন হয় এদের হাত হয়েই আসে। এদের মর্জির উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এরা রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হতে দিতে চায়নি। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী সুদৃঢ় অবস্থানের কারণেই তা বন্ধ করতে পারেনি। তার মানে এই নয় যে প্রধানমন্ত্রীকে কোন বেগ পোহাতে হয়নি। অনেক চাপ মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী তা বাস্তবায়ন করেছেন। তবে এদের চাপ এখনো অব্যাহত আছে।

এখন সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি করবে। ঐ চক্রান্তকারীদের কাছে মাথানত করবে নাকি অত্র এলাকার একমাত্র স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান সার্বিক উন্নয়নে এগিয়ে আসবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2017 Dokhinerkhobor.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com